মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম

জেনে নিন মধু ও রসুন এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং বিশেষ প্রস্তুতপ্রণালী

বর্তমানে মধু এবং রসুন একসঙ্গে খাওয়ার বেশ প্রচলন ঘটেছে। অনেকেই নিয়মিত মধু এবং রসুন একসঙ্গে পান করেন, ভালো সুফলও পাচ্ছেন। আবার অনেকে চাচ্ছেন তারা নতুন শুরু করবেন। সেক্ষেত্রে, তারা জানতে চান মধু ও রসুনের উপকারিতা কি? কিভাবে খেতে হয়? কিভাবে মিশ্রণটি তৈরি করতে হয়? এসব বিষয় নিয়েই আজকের আলোচনা। আসুন শুরু করা যাক!

মধু ও রসুন খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা এর মধ্যে সর্দি জ্বর নিরাময়, ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন নিরাময়, শরীরের ওজন কমানো, রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমানো, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, পাকস্থলির হজমশক্তিও বৃদ্ধি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মধু ও রসুনঃ

আমরা সবাই জানি মধু একটি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক।মধুতে এমন অনেক প্রাকৃতিক জৈব উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। নিয়মিত মধু পান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি

তেমনি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে রসুনে বিদ্যমান রয়েছে অ্যালিসিন যা অর্গানসালফার যৌগ। এই অ্যালিসিন শরীররে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ ক্রিয়াকলাপে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মধু ও রসুন এর উপকারিতাঃ

শুধুমাত্র মধু কিংবা শুধুমাত্র রসুন নিয়মিত খেলেও আপনি অনেক উপকারিতা পাবেন। তবে মধু এবং রসুনের মিশ্রণে এই দুইটি উপকরণের বিভিন্ন উপাদান একসঙ্গে ফার্মেন্টেড হয়ে তৈরি হয় এক বিশেষ প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ঔষধ। এটি আমাদের শরীরের অনেক রোগ থেকেই মুক্তি দিতে সক্ষম। এবং এটি এখন বিজ্ঞানীদের দ্বারাও প্রমাণিত

মধু ও রসুনের এই মিশ্রণটি বিশেষ বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ

  • শরীরে যদি কোন ক্ষত থাকে সেটি শরীরের অভ্যন্তরীণ হোক কিংবা বাহিরে, মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি নিয়মিত সেবন করলে আপনার ক্ষত খুব দ্রুত সেরে উঠবে।
  • মানবদেহের যেকোনো রক্তনালীতে ব্লকেজ দূরীকরণে মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি এই ব্লকেজ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর। এই মিশ্রণটি রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক।
  • মধু এবং রসুন এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি দারুণভাবে কাজ করে। আপনি যদি নিয়মিত এই মিশ্রণটি সেবন করেন আপনার রিপ্রোডাকশন সিস্টেম অনেক উন্নতি করবে এবং অনেক জটিলতাও দূর হয়ে যাবে।
  • এই মিশ্রণটি যেহেতু খুবই শক্তিশালী একটি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক, তাই এটি সর্দি জ্বর নিরাময়েও বিশেষভাবে কার্যকর
  • যারা ব্লাড প্রেসার নিয়ে জটিলতায় ভুগছেন, মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি নিয়মিত খেলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • যারা ওজন কমানোর জন্য খুব চেষ্টা করছেন তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন, আপনাদের শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে এটি বিশেষভাবে সহায়তা করবে।
  • মধু এবং রসুনের মিশ্রণ নিয়মিত সেবনে মস্তিষ্কের সাস্থ্য ভালো থাকে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও বিশেষভাবে কাজ করে।
  • এছাড়া, এটি নিয়মিত সেবনে আমাদের পাকস্থলির হজমশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
মধু ও রসুন এর উপকারিতা
ছবিঃ ইউটিউব

মধু এবং রসুনের মিশ্রণের প্রস্তুতপ্রণালীঃ

এবার আসুন এই মিশ্রণটি কিভাবে তৈরি করবেন সেটি জেনে নেয়া যাক!

উপকরণঃ

  • প্রাকৃতিক RAW মধু। 
  • পরিমাণমত রসুন।

পরিমাণ: একটি কাচের জারের ২/৪ অংশ মধু নিন, ১/৪ অংশ রসুনের কোয়া দিয়ে পূর্ণ করুন। এবং বাকি ১/৪ অংশ ফাঁকা রাখুন।

মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে একদম খাঁটি প্রাকৃতিক মধু এবং ভালো মানের রসুন। বাজারের বিভিন্ন কোম্পানির প্রসেস করা মধু এতে ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোন মাধ্যম থেকে গ্রামীণ প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু অথবা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করে নিতে পারেন। অথবা, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও প্রাকৃতিক মৌচাকের raw মধু নিতে পারবেন। যে রসুনগুলোর কোয়া একটু বড় সাইজের, দেশী রসুনের মধ্যে আপনারা সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন। 

  • প্রথমে একটি পরিষ্কার কাচের জার নিন। এবার জারের মধ্যে পরিমাণ মত খোসা ছাড়ানো রসুনের পরিষ্কার কোয়াগুলি ঢেলে দিয়ে এর মধ্যে মধু দিয়ে দিন। মুধ এমনভাবে ঢালুন যেন মধু দ্বারা রসুনের কোয়াগুলি সম্পূর্ন ডুবে থাকে। তবে জারের ১/৩ অংশ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে অবশ্যই। এবার জারটির মুখ বন্ধ করে একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিন।
  • খেয়াল রাখতে হবে বয়ামের ভেতরে যেন কোনভাবে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে কমপক্ষে ৭ দিন রেখে দিন। এবার ৭ দিন পরে বয়ামের মুখটা খুলে ভিতরে জমা গ্যাস বের করে দিন এবং একটি চামচ দিয়ে মিশ্রণটি নেড়ে দিন।
  • এরপর, আরও ৭ দিন পরে দেখবেন যে রসুনের রঙ পরিবর্তন হয়ে সোনালি রঙ ধারণ করেছে। তখন আবারও পূর্বের ন্যায় জারের মুখ খুলে গ্যাস বের করে দিন এবং মিশ্রণটি নেড়ে দিন।
  • তবে খেয়াল রাখতে হবে রসুন মধুর উপরিভাগে ভেসে থাকছে কিনা। যদি ভেসে থাকে, সেক্ষেত্রে ৩/৪ দিন পর পর জারটি ঝাঁকিয়ে রসুনগুলো উপর নিচ করে দিতে হবে। 
  • এভাবে ২ মাস অপেক্ষা করুন। ২ মাসের মধ্যে মিশ্রণটি ভালোভাবে ফার্মেন্টেড হয়ে যাবে। তখন এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে।
  • তবে অবশ্যই এই ২ মাসের প্রতি সপ্তাহে একবার বয়ামের মুখ খুলে গ্যাস বের করে দিতে হবে নাহলে গ্যাসের প্রেসার কাচের জার ফেটে যেতে পারে। তাছাড়া, ২ মাস হয়ে গেলে তখন সাধারণত আর গ্যাস তৈরি হয়না। সেক্ষেত্রে নিয়মিত জারের মুখ খুলে গ্যাস না বের করে দিলেই হবে।

এখন আপনার গাঁজানো রসুন মধু প্রস্তুত! প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট পরিমাণে সেবন করতে থাকুন।

মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়মঃ

মধু এবং রসুন খাওয়ার সব থেকে উত্তম নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ মধু এবং মধুর মধ্যে থাকা একটি মিডিয়াম বা বড় সাইজের এক কোয়া রসুন একসঙ্গে মুখের মধ্যে নিয়ে খেয়ে নেয়া। দুই থেকে তিন মাস নিয়মিত পান করুন আপনি অবশ্যই অবশ্যই আপনার শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন অনুভব করবেন।

মধু এবং রসুনের মিশ্রণ তৈরি করার জন্য কোন মধুটি ভালো হবে?

এই মিশ্রণটি তৈরির জন্য আপনি যেকোনো প্রাকৃতিক মধুই ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, সম্ভব হলে আপনি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের মধু ব্যবহার করুন। অথবা গ্রামাঞ্চলে যে প্রাকৃতিক চাকের মধু পাওয়া যায় সেটি ব্যবহার করুন। যেহেতু এই মধুগুলি অর্গানিক এবং মাল্টি-ফ্লোরাল হয় সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই বেশি উপকারিতা পেতে পারেন এর থেকে।

মধু ও রসুনের মিশ্রণ জমে গেলে খাওয়া যাবে কিনা?

আপনি যদি মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি তৈরি করার পরে মিশ্রণে বিদ্যমান মধু জমে যায় বা দানাদার হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই খেতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও খাবার নিয়ম একই থাকবে।

সুন্দরবনের মধু এবং কালোজিরা ফুলের RAW ব্যতীত আপনি যে মধু দিয়েই মিশ্রণটি তৈরি করেন না কেন, শীতকালে মিশ্রণটি জমে যাওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। তবে মিশ্রণটি তৈরি করার সময় অবশ্যই তরল থাকতে হবে এবং ফারমেন্টেশন হওয়া পর্যন্ত যেন অবশ্যই তরল থাকে। 

এজন্য, মধু দিয়ে গাঁজানো রসুনের মিশ্রণটি তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেই সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের মধু ব্যবহারের জন্য। কারণ আমাদের দেশে সুন্দরবনের মধুটা সর্বাপেক্ষা উত্তম। গুণ এবং মানের দিক দিয়ে এই মধুটা অন্যান্য সব মধুর থেকে অনেক এগিয়ে। এছাড়া, এই মধুটা কোন অবস্থাতেই সাধারণত জমে যায় না। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব মৌসুমেই মধুটি তরল অবস্থাতেই থাকে।

মধু এবং রসুনের মিশ্রণটি সংরক্ষণের পদ্ধতিঃ

মধু এবং রসুনের এই মিশ্রণটি অনেকেই ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন যা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ফ্রিজে যদি আপনি মধু সংরক্ষণ করেন সে ক্ষেত্রে এই মিশ্রণের গুনাগুন অনেকটাই কমে যায়।

কারণ মধুতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো অতিরিক্ত ঠান্ডায় নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া এই মিশ্রণটিতে ফার্মেন্টেশন হওয়া খুবই জরুরী সেক্ষেত্রে মধু এবং রসুনের এই মিশ্রণটি কক্ষ তাপমাত্রায় ছায়াযুক্ত যেকোন স্থানে রেখে দিন। তবে চেষ্টা করবেন অবশ্যই কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করতে। যদি তা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ফুড গ্রেড প্লাস্টিক বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন।

উপসংহারঃ

মধু ও রসুনের উপকারিতা ঠিকমত পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে মধু দিয়ে গাঁজানো রসুনের মিশ্রণটি তৈরি করে নিতে হবে এবং নিয়মিত মিশ্রণটি সেবন করতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন মধুটি যেন অবশ্যই ১০০% খাঁটি এবং RAW হয়। এব্যাপারে আরও কোন তথ্য জানতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, যারা ভাল মানের প্রাকৃতিক RAW মধু খুঁজছেন তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।

সরাসরি যোগাযোগের জন্যঃ

  • Mobile: 01729677867
  • WhatsApp: 01729677867
  • Messenger: Click Here

ধন্যবাদ!

Leave a Reply