লিচু ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য, গুনাগুণ ও চেনার উপায়

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক মৌচাকের যত ধরনের মধু পাওয়া যায় এর মধ্যে দিনাজপুরের লিচু ফুলের মৌসুমের প্রাকৃতিক মধু যা আমরা লিচু ফুলের মধু বলে চিনি খুবই সমাদৃত। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে আমাদের দেশের যেসকল গ্রামাঞ্চলে প্রচুর লিচু বাগান রয়েছে তার আশেপাশে বুনো মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করে এবং লিচু ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করে তাদের মৌচাকে জমা করে। এর পাশাপাশি এসময় বুনো মৌমাছিরা প্রকৃতিতে বিদ্যমান অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফুল থেকেও নেকটার সংগ্রহ করে । এজন্য, এটিকে লিচু ফুলের মধু বললেও এটি মূলত মাল্টি – ফ্লোরাল মধু, তবে এতে লিচু ফুলের নেকটারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য থাকে। এর স্বাদ খুবই অনবদ্য এবং ক্রেতা সাধারণের মধ্যে এর চমৎকার স্বাদ এবং ঘ্রাণের জন্য খুবই জনপ্রিয় প্রাকৃতিক চাকের এই মধুটি। প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুর পাশাপাশি লিচু ফুলের মৌসুমে মৌ-খামারীরা লিচু ফুলের বাগানে তাদের খামার স্থাপন করে থাকেন। সেখান থেকেও প্রচুর ভালো মনের মধু উৎপাদিত হয়। এই মধুর সিংহভাগই থাকে লিচু ফুলের নেকটার। এই মধুর স্বাদও অনেক সুস্বাদু। 

সংক্ষেপে, লিচু ফুলের মধু দেখতে অনেকটা হলুদ প্রকৃতির তবে ভৌগোলিক অবস্থান এবং একই সময় গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফুলের উপস্থিতির জন্য এ রঙের তারতম্য ঘটতে পারে। মধুটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর অত্যন্ত মিষ্টি সুঘ্রাণ রয়েছে। এই মৌসুমের প্রাকৃতিক চাকের মধু সাধারণত হালকা বা মধ্যম ঘনত্বের হয়। তবে খামার উৎপাদিত মধু তুলনামূলক বেশি ঘনত্বের হয়ে থাকে। শীতকালে লিচু ফুলের মধু আংশিক বা সম্পূর্ণ স্ফটিকায়িত হতে পারে বা জমে যেতে পারে, তবে এতে মধুর গুণগত মানের কোন পরিবর্তন ঘটে না।

লিচু ফুলের মধুর ক্ষেত্রে, এই মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুর চেয়ে খামার উৎপাদিত মধুর দাম বেশ কম। কারণ, প্রাকৃতিক চাকের মধু তেমন একটা সহজলভ্য নয়। তবে, অনেক ক্রেতা সাধারণের মতামত অনুযায়ী, লিচু মৌসুমে খামার উৎপাদিত মধুর চেয়ে প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু অধিক সুস্বাদু।

এই আর্টিকেলটিতে লিচু ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য, লিচু ফুলের মধু খাঁটি কিনা তা চেনার উপায় এবং এই মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে আসুন, শুরু করা যাক!

লিচু ফুলের মধু কখন কিভাবে সংগ্রহ করা হয়?

সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে আমাদের দেশে লিচু গাছগুলিতে প্রচুর মুকুল হতে দেখা যায়৷ এসময় মৌমাছিরা লিচু ফুলে ঘুরে-ঘুরে ফুলের নেকটার সংগ্রহ করে তাদের মৌচাকে জমা করে৷ এভাবেই উৎপন্ন হয় লিচু মৌসুমের মধু বা লিচু ফুলের মধু৷

লিচু ফুলের মৌসুমে দুই ভাবে মধু সংগ্রহ করা যায়ঃ

  • বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর লিচু বাগান রয়েছে৷ পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, প্রভৃতি অঞ্চলে আমরা মাঠের পর মাঠ লিচু বাগান দেখতে পাই৷ এসব অঞ্চলে লিচু ফুলের মৌসুমে বুনো মৌমাছিরা প্রচুর প্রাকৃতিক মৌচাক তৈরি করে৷ এই প্রাকৃতিক মৌচাকগুলি থেকে যে মধু আহরণ করা হয় এটাকে আমরা বলে থাকি লিচু মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু
  • প্রকৃতিতে যখন লিচু ফুলে ভরে যায় তখন আমাদের দেশের মৌচাষিরা তাদের খামারের মৌ-বাক্স গুলি বিভিন্ন বড়-বড় লিচু বাগানে স্থাপন করে থাকেন৷ মৌ-বাক্সে থাকা মৌমাছিরা লিচু বাগানের প্রায় প্রতিটি মুকুল থেকেই নেকটার সংগ্রহ করে তাদের মৌ-বাক্সে জমা করে৷ পরবর্তিতে, মৌচাষিরা মৌবক্সের মৌচাক গুলি থেকে এক্সট্রাক্টর নামক বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মধু বের করে নেন৷ এভাবে যে মধু সংগৃহীত হয় এটাকে বলা হয় লিচু ফুলের মধু৷ খামারে উৎপাদিত মধুও অবশ্যই প্রাকৃতিক মধু৷

লিচু মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু বনাম খামারে উৎপাদিত লিচু ফুলের মধু

  • প্রাকৃতিক মৌচাকে যে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে জমা করে এরা বুনো মৌমাছি৷ মৌমাছির এই প্রজাতির নাম এপিস ডরসেটা৷ এরা পোষ মানে না৷ এরা তাদের ইচ্ছামত বিভিন্ন স্থানে মৌচাক তৈরি করে৷ অন্যদিকে মৌ-খামারিরা লিচু বাগানে যে মৌ-বাক্স গুলি স্থাপন করেন, তাতে যে মৌমাছিরা থাকে সেগুলি এপিস মেলিফেরা প্রজাতির মৌমাছি৷ এরা পোষ মানে৷
  • লিচু মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুতে লিচু ফুলের নেকটারের পাশপাশি বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন ফুলের নেকটারের সংমিশ্রণ থাকে৷ এজন্য আধিক্যতা অনুযায়ী এই মধুতে কখনো-কখনো লিচু ফলের সদৃশ স্বাদ এবং ঘ্রাণ পাওয়া যায়৷ আবার কখনো-কখনো মধুটিতে একটি অন্যরকম সুমিষ্ট স্বাদ এবং ঘ্রাণ পাওয়া যায়৷ এই স্বাদ এবং ঘ্রাণ নির্ভর করে মধুতে কোন ফুলের নেকটার কত শতাংশ আছে তার উপর৷ তবে মৌ-খামারিরা লিচু বাগানে তাদের মৌ-বাক্স স্থাপন করে যে মধু সংগ্রহ করেন এই মধুর স্বাদ এবং ঘ্রাণ অবশ্যই লিচু ফলের সদৃশ হবে৷ কারণ, খামারে উৎপাদিত এই প্রাকৃতিক মধুতে লিচু ফুলের নেকটারই সিংহভাগ থাকে৷
  • এই মৌসুমের প্রাকৃতিক চাকের মধু এবং খামারে উৎপাদিত মধু উভয়ই খুব ভাল মধু, যদি কিনা তা খাঁটি হয়৷ তবে গ্রাহকদের চাহিদা এবং পছন্দকে মূল্যায়ণ করে আমরা লিচু ফুলের মৌসুমের খাঁটি মধুটা সরবরাহ করি এটি নিজস্ব তত্বাবধানে সংগৃহীত লিচু মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু বা বুনো মৌমাছির মধু৷
লিচু ফুলের মধু

লিচু ফুলের মধু চেনার উপায়ঃ

যেকোন মধু চেনা কিংবা মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করার শর্টকাট কোন নিয়ম নেই৷ মধু পরীক্ষা করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল ল্যাব টেস্ট করা৷ তবে এই পন্থাটি বেশ ব্যায় বহুল৷ তাই জনসাধারণের জন্য সহযে খাঁটি মধু চেনার একমাত্র উপায় হল বিভিন্ন মৌসুমের মধুর সঠিক বৈশিষ্ট জানা৷ আপনাদের সুবিধার্তে লিচু ফুলের মধুর বৈশিষ্টগুলি নিম্নে তুলে ধরছিঃ

  • এই মধু দেখতে সাধারণত Light Amber (অনেকটা হলুদ প্রকৃতির) রঙের হয়৷ তবে মধু সংগ্রহের সময়, মধুতে লিচু ফুলের নেক্টারের শতকরা পরিমাণ, স্থান  এবং ঘনত্বের উপর নির্ভর করে মধুর রঙ হালকা বা গাঢ় হতে পারে৷
  • এটি খেতে খুবই সুস্বাদু৷ এতে লিচু ফলের সদৃশ স্বাদ এবং ঘ্রাণ পাওয়া যায়৷ তবে প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুতে বিভিন্ন ফুলের নেকটারের সংমিশ্রণের জন্য এই স্বাদের ভিন্নতা তৈরি হতে পারে৷
  • এই মধুর ঘনত্ব গাঢ় কিংবা পাতলা উভয়ই হতে পারে৷ ঘনত্ব বেশি পাতলা হলে মধুতে ফেনা হতে দেখা যায়। মধুর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না।
  • একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এই মধু আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ  জমে যাবে৷ মধু আংশিক  নাকি সম্পূর্ণ জমবে এটি নির্ভর করবে মধুর ঘনত্ব এবং বিভিন্ন ফুলের নেকটারের আধিক্যতার উপরে৷

লিচু ফুলের মধু কি তেতো হয়ে যায়?

এটি একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলেও সত্যি যে, লিচু ফুলের মধু যেমন খুবই সুস্বাদু তেমনি এই ফুলের মধু যদি নিম্নমানের হয় তবে মধু সংগ্রহের কয়েক মাস পরে মধুতে হালকা তেতোভাব আসতে পারে৷ সাধারণত নিম্নমানের মধু যেমন সি গ্রেডের মধুতে এই হালকা তেতোভাব তৈরি হতে বেশি দেখা যায়৷ বি গ্রেডের মধুর বয়স দীর্ঘদিন হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে মধুতে হালকা তেতোভাব আসতে পারে৷ তবে এ গ্রেডের মধুতে এমনটা হতে সাধারণত দেখা যায় না৷ তবে, এই তেতোভাবটা যে খুব একটা প্রকট তা নয়৷ মধু খাওয়ার পরে গলাতে হালকা তেতো অনুভব হতে পারে৷ ভালো করে  লক্ষ্য না করলে আপনি হয়তো বুঝতেও পারবেন না৷

রেফারেন্সঃ মধু গবেষক মোঃ আল-আমিন হোসেন

তবে আমাদের সংগৃহীত লিচু মৌসুমের প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুতে এই তেতোভাবটা তেমন একটা  পাইনি কখনো আমরা৷  হতে পারে, প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুতে লিচু ফুলের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন  বিভিন্ন ফুলের নেকটারের সংমিশ্রণ থাকে সেজন্য৷

লিচু ফুলের মধুর উপকারিতাঃ

মধু গবেষকদের মতে, সব ফুলের মধুর গুণাগাুণই প্রায় সমান৷ তবে মধুটি হতে হবে অবশ্যই খাঁটি এবং ভালো মানের৷ নিম্নমানের মধু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে এর গুণাগুণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে৷ সংগত কারণেই আলাদা করে লিচু ফুলের মধুর উপকারিতা সম্পর্কে লিখে পোস্টির দীর্ঘায়ন করছি না৷ খাঁটি মধুর উপকারিতা এবং মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের ব্লগে আরেকটি আর্টিকেল আছে৷ উক্ত আর্টিকেলটি আপনারা পড়ে নিতে পারেন৷ আপনাদের সুবিধার্তে আর্টিকেলটির লিংক নিচে উল্লেখ করে দেয়া হবে৷ তবে, লিচু ফুলের মধু খুবই সুস্বাদু এবং সুঘ্রাণযুক্ত হওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে এই মধুর বিশেষ সমাদর রয়েছে৷ বিশেষ করে বাচ্চারা এই মধু খেতে খুবই পছন্দ করে৷

আরও জেনে নিনঃ

ভাল মানের মধু কোথায় পাবেন?

ভালো মানের মধু ক্রয় করতে আপনি চাইলে আমাদের এই ওয়েবসাইটেই সরাসরি অর্ডার করতে পারেন৷ আমরা প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল ঘুরে-ঘুরে অভিজ্ঞ মৌয়াল দ্বারা প্রাকৃতিক মৌচাক ভেঙে ভালো মানের মধুটা সরাসরি আমাদের সম্মানীত ক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করে থাকি৷ অথবা আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন৷

সরাসরি যোগাযোগের জন্যঃ

Cell: 01729677867 WhatsApp
Messenger: m.me/shuddhoshop FB

আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! আর্টিকেলটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে শেয়ার করে অন্যদেরও মধু সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে পারেন৷

ধন্যবাদ!

ছবিঃ লুতফর রহমান সুজন

1 comment

    কেউ কমেন্ট করল না কেন??

Leave a Reply